
ট্রাম্পের নেতৃত্বে মার্কিন প্রভাব: চ্যালেঞ্জ ও অনিশ্চয়তা


মো: আবু সাঈদ ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সি বিশ্বজুড়ে আমেরিকার চিরাচরিত পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে। ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির অধীনে, ট্রাম্প প্রশাসন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, বাণিজ্য, এবং জোটের ক্ষেত্রে নতুন করে মূল্যায়ন শুরু করেন। এর ফলে, বিভিন্ন দেশে এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে আমেরিকার ভূমিকা নিয়ে নতুন করে কথা শুরু হয়েছে। কোথাও কোথাও নতুন নানান প্রশ্নও তৈরি হয়েছে। এখন ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের সম্ভাব্য কিছু প্রধান চ্যালেঞ্জ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উপর তার প্রভাব কি হতে পারে তা জানার জন্য অপেক্ষায় আছে সারা বিশ্ব। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল ফিলিস্থিত থেকে যুদ্ধ সম্প্রসারণ একটা বড় ঘটনা। যার ইরান তো বটেই হুমকিতে ফেলিছিলো মার্কিন ঘাটি থাকা এই অঞ্চলের ১৯ গুরুপূর্ন দেশ ও স্থাপনাকে। ফ্রান্স, জার্মানি এবং ইংল্যান্ডের মতো ইউরোপীয় দেশগুলোর ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি ট্রাম্পের নীতির সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। ঐতিহ্যগতভাবে, আমেরিকা ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির বিরোধিতা করে আসছে। যদি ইউরোপের প্রধান দেশগুলো ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়, তবে এটি আমেরিকার সাথে তাদের সম্পর্কের মধ্যে বড় ধরনের ফাটল ধরাতে পারে। তখন আবার দেখা যাবে ভারত চীনের মত শুল্ক আরোপ হবে বড় হাতিয়ার। সেটা দেখা যাবে তিনশ শতাংশ হতে পারে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে কি সম্ভব আর কি বলা অসম্ভব তা অনুমান করাও কঠিন থেকে কঠিনতর। একইভাবে, ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতের সমাধানের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের পিছিয়ে আসা ইউরোপের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে কয়েকগুন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU) রাশিয়াকে মোকাবেলা করার জন্য আমেরিকার নেতৃত্বের উপর নির্ভরশীল। ট্রাম্প যদি সেই ভূমিকা থেকে সরে আসেন, তবে ইউরোপকে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নতুন কৌশল খুঁজে বের করতে হবে। যা তাদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করতে পারে। শুধু তাই নয় ন্যাটো জোটের ভবিষ্যতকেও ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। ট্রাম্পের শুল্ক নীতি বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি বড় বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। চীন এবং ভারতের মতো উদীয়মান অর্থনীতির সাথে আমেরিকার শুল্ক বিরোধ ওয়াশিংটনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অংশীদারিত্বকে হুমকির মুখে ফেলেছে। যদি ট্রাম্প ভারতের সাথে চলমান সম্পর্কের টানাপোড়েন না কাটিয়ে ওঠেন, দুই মিত্র দেশের মধ্যে আরো সম্পর্কের অবনতি ঘটান, তবে দক্ষিণ এশিয়ায় আমেরিকার অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। চীন এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এই অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব আরও বাড়াতে পারে। যা আমেরিকার কৌশলগত স্বার্থের জন্য নিশ্চিত ভাবে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিকর। জাতিসংঘের আসন্ন ৮০তম সাধারণ পরিষদের আলোচনায় ট্রাম্পের বিভিন্ন নীতি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডের মতো দেশগুলো যদি ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, তবে এটি জাতিসংঘের মতো বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মে আমেরিকার নেতৃত্বের ওপর একটি বড় আঘাত হবে। অন্যদিকে, ব্রিকস (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা) জোটের ক্রমবর্ধমান প্রভাব আমেরিকার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের সাথে আমেরিকার বৈরিতা ব্রিকসের মতো বিকল্প জোটের প্রতি তাদের আকর্ষণ বাড়াতে পারে। এর ফলে, বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আমেরিকার একক আধিপত্য হ্রাস পাবে। ইতিমধ্যে খোদ আমেরিকার কয়েকটি রাজ্যে ট্রাম্প-বিরোধী মনোভাব তীব্র আকার ধারণ করেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের খবরও এসেছে। একজন রাষ্ট্রপ্রধান যখন দেশের ভেতরেই এমন তীব্র বিরোধিতার সম্মুখীন হন, তখন আন্তর্জাতিক মঞ্চে তার নেতৃত্ব স্বাভাবিকভাবেই দুর্বল হয়ে পড়ে। এটি অন্যান্য দেশের নেতাদের ট্রাম্পের নেতৃত্বের ওপর আস্থা হারানোর একটি কারণ হতে পারে। সার্বিক ঘটনাবলি ও অপরাপর তথ্যগুলো একটি সম্ভাব্য রাজনৈতিক দৃশ্যের ইঙ্গিত দেয়। যেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে আমেরিকা আন্তর্জাতিক মঞ্চে এক কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে পারে। ইউরোপের সাথে ফিলিস্তিন ও ইউক্রেন ইস্যুতে মতবিরোধ, ভারত ও চীনের সাথে বাণিজ্য যুদ্ধ এবং আন্তর্জাতিক জোটগুলোতে আমেরিকার প্রভাব হ্রাস – এসবই ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রভাব বিস্তার ও আমেরিকার মোড়লিপনার জন্য সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে। যদি আমেরিকার সাথে অন্যান্য দেশগুলোর এসব বৈরিতা সত্যি স্থায়ী রূপ পায় তবে জাতিসংঘের আসন্ন সাধারণ পরিষদে আমেরিকার নেতৃত্বের ওপর কঠোর সমালোচনা ও চাপ সৃষ্টি হতে পারে। লেখক: মো: আবু সাঈদ; ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ